স্টক মার্কেট আজকের নয়। প্রায় ২০০ বছর আগে থেকেই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গড়পড়তা একটু বেশি বুদ্ধিমান মানুষ শেয়ার মার্কেটে টাকা বিনিয়োগ করে এসেছেন। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি যেমন ভারতে শেয়ার বাজার নিয়ে উৎসাহ ও কৌতূহলের সূচনা ২০২০ এর লকডাউন থেকে।
মানুষ বাড়িতে বসে আর কাহাঁতক রান্নার ভিডিও আর ফালতু সময় কাটাবে? তাই সৃজনশীল কিছু খুঁজতে গিয়ে, আবার কিছুটা বাড়তি উপার্জনের তাগিদে মানুষজন ইউটিউবে শেয়ার বাজার নিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করেন। তারপরই ভারতের শেয়ার বাজারে এসেছে নতুন নবীন বিনিয়োগকারীদের জোয়ার।
Table of Contents
এবার প্রশ্ন হলো, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ কেন করবেন?
ভারতের বলতে গেলে সবাই মাস গেলে যা টাকা পান, সংসার খরচের পর যদি কিছু বেঁচে থাকে সোজা ফিক্সড ডিপোজিট করে দেন। আমাদের বাবা কাকারাও ফিক্সড ডিপোজিটের বাইরে কিছু ভাবতে পারেন না। অনেকে তো তাও করেন না, ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টেই সঞ্চিত অর্থ ফেলে রাখেন। এতে যে ক্ষতিটা হচ্ছে সেটা কিন্তু বোঝেন না তারা।
ক্ষতিটা হলো এই যে যে কোনো ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিট এ বছরে ৭% মতো রিটার্ন দেয়, তার বেশি নয়। এবার ঘটনা হলো এই যে মুদ্রাস্ফীতির হার বছরে ৮% এর বেশি। অর্থাৎ টাকার মূল্য বছরে ৮ টাকা করে পড়ছে , অর্থাৎ আজ যে জিনিসটা ১০০ তাকে কিনছি সেটা পরের বছর হবে ১০৮ টাকা। মুদ্রাস্ফীতি কেন হয় সেটা অর্থনীতির জটিল হিসাব।
অত ঝামেলায় না গিয়ে সোজা হিসেবে হলো এই যে টাকা ফিক্সড ডিপোসিট করলেও যে রিটার্ন পাওয়া যায় সেটা বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির ফলে আপনার টাকার মূল্য যা কমলো সেটাকেও রিকভার করতে পারলো না !
অর্থাৎ, এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে যা বছরে কম করে ১০% রিটার্ন দেবে।
ইতিহাস সাক্ষী আছে, ইকুইটি মার্কেট ছাড়া আর কোনো ইনভেস্টমেন্ট আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে বছরে ১০% দেবে না , এমনকি সোনাও নয় !
ইকুইটি/শেয়ার/স্টক কি?
বড় বড় কোম্পানি, যেমন রিলায়েন্স, এদের টাকা দরকার পরে অত বড় ব্যবসা চালাতে। আজ্ঞে হ্যাঁ, মুকেশ আম্বানি নিজের পকেটের টাকায় রিলায়েন্স কোম্পানি চালান না। ব্যবসার টাকা অনেকভাবে সংগ্রহ করে সমস্ত কোম্পানি, যেমন ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেয়, সাধারণ মানুষরাও কোম্পানিকে টাকা লোন দিতে পারেন বন্ডের মাধ্যমে।
কিন্তু কোম্পানিগুলি তাদের মূলধনের অধিকাংশটাই গড়ে তোলে তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করে। এই অংশীদারিকেই বলা হয় কোম্পানির শেয়ার বা স্টক বা ইকুইটি।
ছোটবেলায় গণিতের বইয়ে অংশীদারি কারবার পড়েছিলেন মনে পড়ছে? ধরুন আপনারা ৫ জন বন্ধু মিলে প্রত্যেকে ১০০০০ টাকা দিয়ে দোকান খুললেন। তাহলে আপনাদের ব্যবসার মূলধন হলো ৫০০০০ টাকা। প্রত্যেকের অংশীদারিত্ব দাঁড়ালো মাথাপিছু ২০%।
এবার যদি খরচ আর দোকানের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির জন্য কিছু টাকা সরিয়ে রেখে আপনাদের দোকান থেকে মাসে ১ লক্ষ টাকা আয় হয় তাহলে আপনারা ৫ বন্ধু প্রত্যেকে ২০% হিসেবে মাথাপিছু ২০০০০ টাকা পাবেন। অর্থ্যাৎ, ১ শতাংশ শেয়ারের বর্তমান মূল্য হলো ১০০০ টাকা। এই হলো ইকুইটির সারাংশ।
এরপর ধরুন মাসে মাসে দোকানের লাভ বেড়েই চলেছে। তাহলে আপনাদের শেয়ারের মূল্য বাড়ছে। এই অবস্থায় যদি নতুন কেউ এসে বলে আমিও এই দোকানের শেয়ার চাই তাহলে নিশ্চই ১ শতাংশ শেয়ারের দাম ১০০০ এর বেশি টাকায় তাকে দিতে চাইবেন তাই তো? যাতে যিনি তার শেয়ার বিক্রি করলেন তার লাভ হয়।
সুতরাং, যে কোম্পানির লাভ মাসে মাসে বাড়বে তার শেয়ার এর দামও বাড়বে। কারণ সবাই তা কিনতে চাইবে।
তেমনি, যে কোম্পানির বর্তমানে লোকসান হচ্ছে, তার শেয়ারের দাম কমবে কারণ এখন কেউ তার শেয়ার রাখতে চাইবে না।
এই কন্সেপ্টকে বলা হয় ফ্রি মার্কেট ইকোনমি। অর্থ্যাৎ যে শেয়ারের চাহিদা বেশি তার দাম বাড়বে আর যার খারাপ সময় চলবে তার দাম কমবে কারণ চাহিদা কম। শুনতে নিষ্ঠুর ওলেও এটাই বাস্তব এবং শুধু শেয়ার বাজার নয়, আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কখন কোন শেয়ার কিনবো বেচবো?
সুতরাং, আপনার যখন মনে হবে যে অমুক কোম্পানির স্টকের দাম বাড়বে (কারণ তার বিক্রিবাটা ইদানিং বাড়ছে), তখন আপনি কিনে নেবেন। যখন মনে হবে যে অনেক হয়েছে, এই ব্যাটা আর বাড়বে না, তখন আপনি সেটা বেচে দিয়ে লাভ করে নেবেন। এই হলো শেয়ার মার্কেট।
কিন্তু মাথায় রাখবেন, বেশি ঝুঁকি নিলে যেমন লাভ ও আছে, তেমনি ক্ষতি ও আছে। সুতরাং আপনি যদি দেখেন হঠাৎ কোনো কোম্পানির স্টকের দাম হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে, সেটা কিনলে লাভ হতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি বেশি হওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
তাই আজ মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নিন , NIFTY বা SENSEX এর প্রথম ১০-২০টা কোম্পানি যারা খুব বড় কোম্পানি, তাদেরই শেয়ার কিনবেন। এতে হয়তো ১০ দিনেই বড়োলোক হবেন না (যেটা কোনোদিনই সম্ভব নয়), কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে (২-৫ বছরে) টাকা বাড়বে, বছরে ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে। এই হিসেবে ৫ বছরে টাকা দ্বিগুন হবে। মাথায় ঢুকিয়ে নিন, এর থেকে বেশি রিটার্ন আর কেউ দেবে না , কেউ দেবে বললে সেটা স্ক্যাম, এধরণের প্রতারকদের থেকে সাবধান।
আর যদি স্টক বাছাই করতে না পারেন, অথবা একদম নতুন স্টক মার্কেটে পা রেখেছেন, তাহলে প্রথমেই সরাসরি স্টক না কিনে বরং মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখুন। মিউচুয়াল ফান্ড ও আপনার টাকা নিয়ে শেয়ার মার্কেটেই রাখে কিন্তু এক্ষেত্রে স্টক বাছাইয়ের কাজ করেন ওই মিউচুয়াল ফান্ডের নিজস্ব ফান্ড ম্যানেজার, যিনি অনেক পড়াশোনা করে আসা অভিজ্ঞ লোক। তাই মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো আপনার জন্য।
স্টক বা মিউচুয়াল ফান্ড এ নিবেশ করতে Groww App ডাউনলোড করুন। এর কোনো চার্জ নেই। বিনাপয়সায় শেয়ার বাজারে পা রাখুন আর বছরে কোনো ফী ও লাগবে না।
নিচের এই ছবিটি ক্লিক করে Groww ইনস্টল করলে ১০০ টাকা বোনাস পাবেন।
Groww এ ১০ মিনিটে একাউন্ট খুলতে এই ভিডিও টি দেখে নিন।
Zerodha তেও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, বিশেষত যদি Intraday trading এর শখ থাকে
পড়ুন: ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট কি?
কিভাবে নিরাপদে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা যায়
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আপনাকে Zerodha বা Groww তে একাউন্ট খুলতে হবে যেখানে আপনি ট্রেডিং কাম ডিম্যাট একাউন্ট পাবেন।
Insurance and Investment Advisor at ICICI Prudential. Traveller, Businessman, Marketer.
“Stock Market: শেয়ার মার্কেটে নিরাপদে কিভাবে Invest করবেন?”-এ 2-টি মন্তব্য
মন্তব্য করা বন্ধ রয়েছে।